একজন
মুসলমান হিসেবে আমরা যদি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল-কুরআন এর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে
পাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে বলেছেন, “আমি কোরআনে এমন বস্তু
নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত।” (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮২)
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেছেন, ‘দোজখি লোক দেখার
যাদের ইচ্ছা থাকে, তাদের বলো, যার
কোনো দিন রোগ হয়নি তাকে যেন দেখে।’ অর্থাৎ
অসুস্থতাও আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত। এখন যদি বলি অসুস্থতা-সুস্থতা দু’টিই
আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাহলে আমরা অযথা ওষুধ খাচ্ছি কেন? ওষুধের কি কোনো ক্ষমতা নেই! হযরত মুসা (আ.) এক বার পীড়িত হয়েছিলেন।
ইসরাইল বংশীয় অভিজ্ঞ লোকেরা বলেছিল, ‘অমুক দ্রব্য এ রোগের
ওষুধ, আপনি তাহা ব্যবহার করেন’ তিনি
বলেছিলেন, ‘আমি ওষুধ সেবন করবো না, স্বয়ং আল্লাহ আমাকে আরোগ্য করবেন।’ তার রোগ
ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তিনি কিছুতেই ওষুধ সেবনে সম্মত হলেন না, পীড়াও দূর হলোনা। ইতিমধ্যে ‘ওহী’ নাজেল হলো, ‘হে মুসা! আমি নিজের গৌরবের শপথ
করে বলছি, ‘‘তুমি যতোদিন ওষুধ সেবন না করবে, আমি ততোদিন কিছুতেই তোমাকে আরোগ্য করবো না। অতঃপর তিনি ওষুধ সেবন করে
স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হাদিস শরিফে আছে, হযরত
মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ!
রোগ কি কারণে আর আরোগ্যই বা কি কারণে ঘটে?’ উত্তর এসেছিল,
‘উভয়ই আমার আদেশে ঘটে’ । তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘চিকিৎসক তবে
কোনো কাজের জন্য হয়েছে? উত্তর এলো, ‘কতগুলো
লোক চিকিৎসা কার্যে, ওষুধের উপলক্ষে জীবিকা পাবে এবং আমার
বান্দাদের প্রফুল্ল রাখবে এ উদ্দেশে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।’ অর্থাৎ মানুষের উচিত, যিনি ওষুধ সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি যেন ভরসা করে, ওষুধের ওপর যেন কিছুমাত্র ভরসা না করে, কেননা
বহুলোক ওষুধ সেবন করেও মারা যাচ্ছে। (সৌভাগ্যের পরশমনি, ইমাম
গাযযালী (র.) )
জন্ম-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা ইত্যাদি সবইতো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
নিয়ন্ত্রণে। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি
করেছেন, অতঃপর তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করেন, যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন, যখন আমি
রোগাক্রান্ত হই, তিনি আমাকে আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা আশ-শে’ আরা, আয়াত
৭৮-৮১)
আল্লাহ
তা’আলা যে বান্দার মঙ্গলের জন্য রোগ দেন এই কথাটাই আমরা মানতে নারজ বরং
একটু অসুস্থ হলেই আমরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দেই। মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি
অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে একটি রাত অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সদ্যজাত শিশুর ন্যায়
নিষ্পাপ করে দেবেন।”
সুতরাং
রোগমুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোনো এক সাহাবি তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিয়ে তিনি তাকে মধু
পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবি বললেন, অসুখ আগের মতো বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও
যখন সংবাদ এলো যে, অসুখের কোনো পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে
সত্য, ওষুধের কোনো দোষ নেই। রোগীর বিশেষ মেজাজের কারণে
ওষুধ দ্রুত কাজ করেনি।’’ এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো
হয় এবং সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (তফসীর মা’ আরেফুল কুরআন,
পৃষ্ঠা-৭৪৭)
বান্দার
মেজাজ বা ধারণার ওপর আল্লাহ তা’আলার ফয়সালা নির্ভর করে থাকে। আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন কোরআনে বলেছেন, “মৌমাছির পেট থেকে রং
বেরংয়ের পানীয় নির্গত হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের
প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা আন-নাহল,
আয়াত ৬৯) আল্লাহ তা’আলা যে জীবন বিধান
দিয়েছেন তাই মানুষের সমগ্র জীবনের সর্বদিকের ওষুধ। রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন
উপযুক্ত চিকিৎসক, রোগ নির্ণয়, সঠিক
ওষুধ এবং সঠিক সেবনবিধি। এ চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে রোগের চিকিৎসা।
আল্লাহ তা’আলা রোগ সৃষ্টি করেছেন, তার
জন্য ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। (বুখারি) সবশেষে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে
বর্ণিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি উক্তির মাধ্যমে লেখা শেষ
করবো তা হলো, “তোমরা দু’টি
শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি
মধু (আহার্যের মধ্যে) এবং অপরটি আল কুরআন (কিতাবসমূহের মধ্যে) (মিশকাত শরীফ)।
No comments:
Post a Comment